Friday, March 10, 2017

অষ্টম শ্রেণি বাংলা প্রথম পত্র মানবধর্ম লালন শাহ্ EducareBDonline.blogspot.com


অষ্টম শ্রেণি
বাংলা প্রথম পত্র


মানবধর্ম
লালন শাহ্

সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
⬜ ‘মানবধর্ম’ কবিতাটিতে যেসব বিষয়ে ধারনা দেওয়া হয়েছে:
ক্স জাত-পাত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা
ক্স জাত সম্পর্কে লালন শাহের অভিমত
ক্স মনুষ্য ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম
ক্স মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ
ক্স জাত নিয়ে বড়াই কারীর পরিণতি
সারকথা:
মানবতাবাদী মরমী কবি লালন শাহ রচিত ‘মানবধর্ম’ একটি গীতি কবিতা। লালন রচিত “সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে” ⎯ শিরোনামের গানটি কবিতা হিসাবে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় মানবধর্মকে-সকল ধর্ম-জাত। প্রথার উদ্ধের স্থান দেওয়া হয়েছে। কবিতায় লালন ফকীর মানুষের জাত পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। কেননা তিনি নিজে কোন জাতের বা কোন ধর্মের অনুসারী এমন প্রশ্ন আগেও ছিল এখনও আছে। লালনের জাত-ধর্ম নিয়ে উত্থাপিত এমন প্রশ্নের জগতে তিনি বলেছেন জাতকে তিন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। বরং মানুষ্যইধর্ম তাঁর কাছে মূল কথা। তিনি জাতের ভিন্নতায় বিশ্বাস করেন না। মানুষকে স্থান দিয়েছেন সবার উপরে। তাঁর বিশ্বাস মানুষকে ছাপিয়ে ধর্ম বড় হতে পারে না। কেননা মানুষের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ধর্ম। মানুষের চুড়ান্ত কাজ অথ্যাৎ জন্ম, মৃত্যু সব সময়ই একইভাবে হয়ে থাকে। নিজ নিজ জাত বা ধর্মের পরিচয় তখন মানুষ পরিচিত হয় না। তখন সব মানুষের একই অবস্থান থাকে। তাই মরমী সাধক লালন মনে করেন জাত ধর্মভেদ মানুষের সৃষ্টি। মানুষ্য ধর্মই সবচেয়ে বড়। পৃথিবীতে মানুষের নানা বিভাজন, না বৈষম্য বিরাজমান। মানুষ মিথ্যা পরিচয়ে একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। জাত ধর্মের কথা বলে মানুষকে ছোট করে, মানবতাকে অস্বীকার করে। পৃথিবীর সকল মানুষের জন্ম-মৃত্যু একই প্রক্রিয়ায় ঘটলেও অকারণে নিজেদের মাঝে নানা বিভেদের দেয়াল তুলে দেয়। কিন্তু লালন কামনা করেছেন এ জাত-পাত, ধর্মভেদ ভুলে মানুষ্যধর্ম পালন সকলের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিৎ।
আলোচ্য কবিতায় সব কুসংস্কার, জাতভেদ, ধর্মভেদ ত্যাগ করে মানুষকে মানবধর্মে উজ্জীবিত হতে প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পরিচয়ের চেয়ে মানুষের মানুষ হিসেবে পরিচয়ই বড়। তাই জাত-ধর্ম নিয়ে মিথ্যা বড়াই করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এটাই ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলবক্তব্য ও বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে কবিতাটির নামকরণ করা হয়েছে।     
অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর:
১। উদ্ধৃত অংশটুকু পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জগৎ জুড়িয়া একজাতি আছে
সে জাতির নাম মানুষ জাতি;
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত
একই রবি শশী মোদের সাথী।
বাহিরের ছোপ আঁচড়ে সে লোপ
ভিতরের রং পলকে ফোটে
বামুন, শূদ্র বৃহৎ, ক্ষুদ্র
কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে। 
(ক) ‘কূপজল’ অর্থ কী?
উত্তর: ‘মানবধর্ম’ কবিতায় ব্যবহৃত ‘কূপজল’ অর্থ কুয়োর পানি।
(খ) জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় কেন−ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মের নাম ‘মানবধর্ম’। মানবধর্মের কাছে জাতপাতের পরিচয় বড় তুচ্ছ ব্যাপার। তাই জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
‘মানুষ’ পরিচয়েই পৃথিবীর মাঝে মানুষ মহীয়ান। মানুষ পরিচয়েই পৃথিবীর সকল মানুষ সমান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না। বরং এটা মানুষের মাঝে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। মানবতাবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে একজন ব্যক্তি প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া মানুষের চুড়ান্ত মুহূর্তে অর্থাৎ জন্ম মৃত্যুর সময় জাতের কোন চিহ্ন থাকেনা। এগুলো মানুষের তৈরি। তাই জাত পাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।
(গ) উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের যে মিল পাওয়া যায় তা আলোচনা কর।
উত্তর: মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘মানুষ জাতি’ পরিচয়ের দিক থেকে উদ্দীপক ও মানবধর্ম কবিতায় মানুষের মিল পাওয়া যায়। নিচে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
মরমী সাধক লালন ফকীর তাঁর ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের মনুষ্যত্ব বোধের জয়গান করেছেন। তাঁর মতে মনুষ্যত্ববোধ বা মানবতা বোধই মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম, ‘মানুষ’ পরিচয় দ্বারাই পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হয়েছে। মানুষ পরিচয়েই পৃথিবীর সকল মানুষ সমান মর্যাদাবান। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় লালন ফকীর মানুষের জাত পাতকে অস্বীকার করেছেন। তিনি জাতের ভিন্নতায় বিশ্বাস করেন না। তিনি মানুষকে স্থান দিয়েছেন সবার উপরে। তাঁর বিশ্বাস, মানুষকে ছাপিয়ে ধর্ম বর্ণের পরিচয় বড় হতে পারে না। কেননা জন্ম মৃত্যুর সময় মানুষের জাতের কোন চিহ্ন থাকে না। জাত ধর্মের কথা বলে বরং মানুষকে ছোট করা হয়। মানবতাকে অস্বীকার করা হয়। সুতরাং জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নয় বরং মানুষ পরিচয়ই মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয়।
উদ্দীপকের কবিতাংশেও মানুষের সবচাইতে বড় পরিচয় ‘মানুষ’ পরিচয়কেই প্রকাশ করা হয়েছে। সারা জগতে এক জাতি আছে যে জাতির নাম মানুষ জাতি। অর্থাৎ পৃথিবীর মাঝে ‘মানুষ জাতি’ পরিচয়েই সকল মানুষ সমান। প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গেও মানুষের একই পরিচয়। সকল মানুষ একই পৃথিবীর সন্তান। একই রবি-শশী থেকে তারা আলো পাই। সবার শরীরে একই রক্ত প্রবাহিত। ‘মানুষ’ পরিচয়ের কাছে বামুন শুদ্র বা বৃহৎ ক্ষুদ্রের পরিচয় তুচ্ছ। উদ্দীপক মানবধর্ম কবিতায় মানুষের এ মৌলিক পরিচয়ের মিল পাওয়া যায়।
(ঘ) উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় যে ধর্মচর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা মূল্যায়ন কর।
উত্তর: মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্মের নাম মানবধর্ম। উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের মানব ধর্ম চর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়ছে।
মরমী সাধক ও সুর স্রষ্টা লালন ফকীর রচিত ‘মানবধর্ম’ একটি গীতি কবিতা। এ কবিতায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানব প্রেমের জয়গান করা হয়েছে। ধর্ম, বর্ণ বা জাত পরিচয়ের উর্ধ্বে ‘মানুষ’ পরিচয়ের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। কবি মূলত জাত পাতের পরিচয়ে বিশ্বাসী নন। তিনি জাত, ধর্ম বা বর্ণের বিভেদকে স্বীকার করেন না। জাত-বিভেদের ধারণা লালনের কাছে এতটাই মূলহীন যে, তিনি জাতের চিহ্নকে সাতবাজারে বিকিয়েছেন। মানুষের আসা যাওয়ার সময় জাতের কোন চিহ্ন বহন করেনা। অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর সময় মানুষের জাতের কোন পরিচয় থাকেনা। জাত, ধর্ম বা বর্ণের বিভেদ মূলত মানুষের সৃষ্টি। মানুষ বিভেদের স্বার্থে এ বিভেদ সৃষ্টি করে তা লালন করে। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় এসবের বিরুদ্ধোবরণ করা হয়েছে। লালনের মতে পৃথিবীতে মানুষই মহীয়ান। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়। তাই ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের ‘মানষ’ পরিচয়ের মহাত্ম ঘোষণা করা হয়েছে। কবিতায় মানুষের ‘মানবধর্ম’ বা ‘মনুষ্যধর্ম’ চর্চার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য উদ্দীপকের কবিতাংশেও ‘মানবধর্ম’ চর্চার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে পৃথিবীতে এক জাতি আছে তার নাম মানুষ জাতি। অর্থাৎ মানুষ পরিচয়ে পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন। ‘মানুষ’ পরিচয়েই সব মানুষ সমান মর্যাদা বান। প্রতিটি মানুষের মৌলিক বিষয়গুলো এক। সবার শরীরেই একই রঙের রক্ত প্রবাহিত ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সবাই সমান কষ্ট পাই। তাই ছোট-বড় বা বামুন-শুদ্রের পরিচয়ে মানুষ পরিচিতি নয়। বরং ‘মানুষ’ পরিচয়েই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব হয়েছে। সুতরাং বলা যায় উদ্দীপক ও মানবধর্ম কবিতায় মানুষের মানবতাবোধ ও মনুষ্যত্ববোধে উজ্জীবীত হয়ে ‘মানবধর্ম’ চর্চা করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আর এটাই মানুষের আদর্শ হওযা উচিৎ। কেননা সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।


অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর:
২। নিচের উদ্দীপকের আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জামলতা একটি গ্রামের নাম যার একদিকে হিন্দু ও অন্যদিকে মুসলমানদের বসবাস। প্রায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। বাজারে যাবার পথে খাল পার হবার জন্য দুটি সাকোঁ আছে। একটি দিযে হিন্দুরা অন্যটি দিয়ে মুসলমানরা পায় হয়। কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উভয় ধর্মের লোক আসে না, এমনকি কারও বিপদের দিনেও কেউ এগিয়ে আসেনা।
(ক) গঙ্গারজল কাদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক?
উত্তর: গঙ্গারজল বিন্দুধর্ম অনুসারীদের কাছে পবিত্রতার প্রতীক।
(খ) ‘মূলে একজল সেযে ভিন্ন নয়’⎯ বলতে কী বোঝানা হয়েছে?
উত্তর: ‘মূলে একজন সে যে ভিন্ন নয়’ কাথাটি দ্বারা প্রকৃত পক্ষে জলের অভিন্ন অবস্থাকে বোঝাকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ স্থানভেদে জলের রূপের ভিন্নতা থাকলেও জলের উৎস এক ও অভিন্ন।
স্থান বা পাত্র ভেদে আমরা জলকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চিনি। গর্তে থাকলে যে কুয়োর পানি হয় সেটি আবার গঙ্গায় গেলে হয় পবিত্রতার প্রতীক। কিন্তু প্রাপ্তি স্থান ভিন্ন হলেও সব জলের উৎস একই। তেমনি পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা রূপে মানুষের বসবাস হলেও ‘মানুষ’ পরিচয়ে পৃথিবীর সব মানুষ সমান মর্যাদাবান। আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা কবি মূলত জলরূপে মানুষের সমতার কথা ব্যক্ত করেছেন।
(গ) উদ্দীপকে দুই ধর্মের লোকের ভেদাভেদের বিষয়টি কীভাবে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপকের দুই ধর্মের লোকের ভেদাভেদের বিষয়টি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় বর্ণিত জাতপাত নিয়ে মানুষের বাড়াবাড়ি করার মনোভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নিচে উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করা হল।
মরমী সাধক লালন শাহ্ রচিত ‘মানব ধর্ম’ একটি গীতিকবিতা এ কবিাতায় তিনি-মানুষের মানবতাবোধ বা মনুষ্যত্ববোধের জয়গান করেছেন। কবির মতে, মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। ‘মানুষ জাতি’ পরিচয়ের কাছে অন্য সকল ব্যাপার তুচ্ছ। জাত, ধর্ম বা বর্ণ পরিচয়ে মানুষ পরিচিত নয়। কবি এগুলোকে স্বীকার করেন না। তাঁর মতে এগুলো মানুষের তৈরি কৃত্রিম ভেদ। জাত পাত নিয়ে বাড়াবাড়ি মানুষের মাঝে অশান্তি সৃষ্টি করে। মানবতাকে হেয় করে। কিন্তু পৃথিবীতে কিছু মানুষ জাত পাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। তারা মানুষের জাত, ধর্ম বা বর্ণ নিয়ে প্রশ্ন করে। তারা মানুষের ধর্মীয় শৃঙখলে আবদ্ধ করে মানব সামজে বৈষম্য তৈরি করে। এতে সমাজে বিশৃঙখলা তৈরি হয়, শান্তি নষ্ট হয়।
‘মানবধর্ম’ কবিতার এই কৃত্রিম ভেদাভেদ দিকটির সাথে আলোচ্য উদ্দীপটি সাদৃশ্যপূর্ণ। এখানে জামলতা গ্রামে বসবাসকারী মানুষের মাঝে ধর্মীয় ভেদাভেদ বা বৈষম্য প্রকাশ পেয়েছে। ধর্মীয় ভেদাভেদের কারণে তাদের মাঝে সামাজিক সম্প্রীতি নাই। বরং ঝগড়া বিবাদ, মারামারি গেলেই থাকে। ধর্মীয় বিভাজনের কারণে তাদের মাঝে মতের ভিন্নতা ও পথের ভিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরের কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না। এমনকি বিপদে আপদেও একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসেনা। ধর্মীয় বিভাজন তাদের মাঝে একটি কঠিন দেয়াল তুলে দিয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের এ ভিন্ন বাস্তবতা ধর্মীয় বিভাজনের ফলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার দিক থেকে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাথে সাদৃশ্য পূর্ণ।
(ঘ) “ধর্ম পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়” ⎯ ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
উত্তর: ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ জাত, ধর্ম বা বর্ণ নয়, মানুষ পরিচয়েই পৃথিবীর সব মানুষ সমান মর্যাদাবান। সুতরাং বলা যায় ‘ধর্ম পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়’−মন্তব্যটি যথার্থ। নিচে ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই করা হল:
মানুষকে বলা হয়েছে ‘আশরাফুল’ মাখলুকাত অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীতে ‘মানুষ’ পরিচয়েই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষিত হয়েছে। ‘মানুষ’ পরিচয়ের কাছে ধর্ম, বর্ণ বা জাতের পরিচয় তুচ্ছ ব্যাপার। জাত, ধর্ম, বর্ণ থেকেও বড় কথা আমরা মানুষ। ধর্ম মানুষকে শান্তির পথে পরিচালিত করে। পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুপ্রাণিত করে এবং পুণ্য কাজ করার প্রতি উৎসাহ যোগায়। কোন ধর্মই মানুষের পাপ কাজকে সমর্থন করে না। কিন্তু এ ধর্মের কারণে মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে। কিছু মানুষ ধর্মীয় পরিচয়কে পুঁজি করে মানুষের মাঝে ছোট-বড়, বামুন-শুদ্রের পার্থক্য সৃষ্টি করে। এতে মানবতা লংঘিত হয়, মনুষ্যবোধ অপমানিত হয়।
পক্ষান্তরে পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। ‘মানুষ জাতি’ পরিচয় দ্বারা মানুষের প্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। ‘মানুষ’ পরিচয় পৃথিবীর সব মানুষ এক এবং অভিন্ন। মানবতার প্রশ্নে সব মানুষ সমান মর্যাদাবান, সৃষ্টিগতবাবে মানুষের মাঝে কোন ভেদাভেদ নাই। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়টাই বড় করে দেখা হয়েছে। জাত পাতের পরিচয়কে স্বীকার করা হয়নি। সারা পৃথিবীতে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র পরিচয়ের উর্দ্ধে যে সমগ্র মানব সমাজ, কবি এই কবিতায় মানুষের সেই পরিচয়কেই তুলে ধরেছেন। মানুষ জাত ও ধর্মভেদে যে ভিন্নতার কথা বলে লাল তা বিশ্বাস করেন না। তাঁর মতে মনুষ্যধর্মই মূলকথা।
‘মানবধর্ম’ কবিতায় ধর্ম, বর্ণের বেড়াজাল ছিন্ন করে মানুষের মনুষ্যত্ব বোধে প্রজজ্বলিত হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। কেননা ধর্মীয় চেতনা থাকা সত্ব্ওে মানুষ যদি মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে তবে কোন দিন সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। তাই ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়, তার চেয়ে বড় মানবধর্ম। সুতরাং “ধর্ম পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়।”− মন্তব্যটি যথার্থ ও সার্থক।
৩। উদ্ধৃত অংশটুকু পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী আন্দোলনের কিংবদন্তী নেতা নেলসেন ম্যান্ডেলা। তিনি সারা জীবন মানুষের জয়গান করেছেন। শুধু বর্ণের কারণে মানুষে মানুষে ভেদাভেদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোরভাবে আন্দোলন করেছেন। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই।”
(ক) লালন শাহ্ কোন ধরণের কবি?
উত্তর: সুর সাধক লালন শাহ্ মরমী কবি ছিলেন? তিনি ধর্ম-বর্ণের এ বিভেদকে ‘ফাতা’ হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন।
(খ) লোকে গৌরব করে যথা-তথা, ⎯ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: লোলে গৌরব করে যথা-তথা দ্বারা জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ নিয়ে মানুষের মিথ্যা অহংকারকে বোঝানো হয়েছে।
মানুষ পরিচয়ে পৃথিবীর সব মানুষ সমান মর্যাদাবান। কারও উপর কারও প্রাধন্য নাই। কিছু কিছু মানুষ অযথা জাতপাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। তারা জাতিভেদ, গোত্রভেদ, বর্ণভেদ ও বংশকৌলীণ্য ইত্যাদি কৃত্রিম পরিচয়ে নিজেদের পরিচয়কে করেছে সংকীর্ণ ও গ-িবদ্ধ। ছোট-বড়, উঁচু-নিচু ও ধনী-গরিবের বৈষম্য করে তারা মানুষকে হেয় করে, মানবতাকে অপমান করে। কিন্তু ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি তাদের অযথা গর্ব-অহংকার করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছেন। কেননা তাঁর মতে, জাত পাত নিয়ে গর্ব করা সম্পূর্ণ নিরর্থক।
(গ) কোন দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে লালন শাহের সাদৃশ্য আছে? ⎯ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বর্ণপ্রথা ঘৃণা করার দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে নিলসেন ম্যা-েলার সাথে লালন শাহের সাদৃশ্য আছে। নিচে ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করা হল:
নেলসন ম্যা-েলা ইতিহাসের এক ক্ষণজন্মা মহা পুরুষ। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী আন্দোলনের কিংবদন্তী নেতা। বর্ণ প্রথা বিলোপ করে কালো মানুষদের ‘মানুষের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে তাঁর ত্যাগ, শ্রম ও নেতৃত্ব বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। তাইতো বিশ্ববাসী কালোদের এই প্রাণপ্রিয় নেতা ম্যা-েলাকে হৃদয়েরমণি কোঠায় স্থান দিয়েছে পরম শ্রদ্ধাভরে। তৎকালীন সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় চরম বর্ণপ্রথা চালু ছিল। শ্বেতাঙ্গরা, কৃষ্ণাঙগ আফ্রিকানদের মানুষের সমমর্যাদার কখনও ভাবতে পারেনি।  তাদের সাথে করা হত বর্বর বন্য পশুদের মত আচরণ মৌলিক চাহিদা থেকে শুরু করে যাপিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কৃষ্ণাঙগদের সাথে বৈরি মনোভাব পোষণ করা হত। সর্বোপরি তাদের মানুষ বলেই মনে করা হত না। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন নেলসেন ম্যা-েলা। তিনি পৃথিবীর বুক থেকে বর্ণ প্রথার বিষবৃক্ষ উচ্ছেদ করতে চোয়ালবদ্ধ সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
মরমী সাধক লালন শাহ্ রচিত ‘মানবধর্ম’ কবিতায় আমরা নেলসেন ম্যা-েলার এই মনোভাব লক্ষ করি। কবিতায় লালন মানুষের মাঝে জাতপাত ও ধর্ম-বর্ণের বিভেদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি ধর্ম-বর্ণের এ বিভেদকে এ বিভেদকে ‘ফাতা’ হিসেবে অখ্যায়িত করেছেন। এবং এটাকে সাত বাজারে বিকিয়ে এসেছেন। তাঁর মতে ধর্ম-বর্ণ নয়, মানুষের সবচাইতে বড় ধর্ম হল মানবধর্ম। সুতরাং বলা যায় এ দৃষ্টিকোণ থেকে নেলসেন ম্যা-েলার সাথে মরমী কবি লালন শাহের মিল আছে। কেননা উভয়ই ‘মানবধর্ম’ তথা মনুষ্যধর্ম চর্চার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
(ঘ) “মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই।” ⎯ উক্ত যুক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই−চ-ীদাসের এই উক্তিতে প্রকাশ পৃথিবীতে মানুষই মহীয়ান, মানুষই গরীয়ান। মানুষের চয়ে বড় কিছু পৃথিবীতে নাই। মানুষের মাঝে নেই কোন ভেদ, নেই কোন ব্যবধান। সৃষ্টি সুখের লীলাতে সকল মানুষ সমান মর্যাদাবাণ। তাই বলা যায় “মানুষের মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই।”−উক্তিটি সঠিক। নিচে উদ্দীপক ও মানবধর্ম কবিতার আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করা হল:
আলোচ্য উদ্দীপকটিতে বর্ণবাদী আন্দোলনের কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যা-েলাকে ঘিরে মানবমুক্তির জয়গান ধ্বণিত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে বর্ণপ্রথার বিষবৃক্ষে গোটা আফ্রিকার সমাজ ছিল কলুষিত। সাদা আর কালোদের মাঝে ছিল চরম বৈরী সম্পর্ক। শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গদের মানুষ বলেই স্বীকার করত না। তাদের সাথে বর্বর পশুদের মত আচরণ করত। নেলসন ম্যা-েলা তাই বর্ণপ্রথা বিলোপের জন্য আন্দোলন শুরু করলেন। তার মতে বর্ণ বা রঙ দ্বারা মানুষের পরিচয় প্রকাশ পায় না। কেননা কালো আর ধলো এটা কেবল বাহিরের রঙ, ভেতরে সবারই সমান রাঙা। মৌলিক ব্যাপারে সব মানুষের সমান অনভূতি। ধর্ম-বর্ণের কারণে তাই মানুষের মাঝে ব্যাবধান করা উচিৎ নয়। সবাই মানুষ এবং সবাই একই পৃথিবীর সন্তান। মানুষে মানুষে নেই কোন ভেদাভেদ।
মনবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্ তাঁর ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষেরই জয়গান করেছেন। এ কবিতায় লালন বলেছেন, তিনি জাতকে গুরুত্ব পূর্ণ মনে করেন না। তাঁর কাছে মনুষ্যধর্মই মূলকথা। তিনি জাতপাতকে অস্বীকার করে বলেছেন। মানুষের জন্ম মৃত্যুর সময় কোন জাতের চিহ্ন থাকে না, এগুলো স্বার্থবাদী মানুষের কৃত্রিম ভেদ। জাত বা ধর্ম-বর্ণের পার্থক্য মানুষের মাঝে বিভেদ তৈরি করে। এটা মানবতা বা মনুষত্বের অপমান। তাই জাত পাত বা ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কারও বাড়াবাড়ি করা উচিৎ নয়।  আলোচ্য উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে তাই বলা যায়, প্রকৃত অর্থে মানুষে মনুষে কোন ভেদাভেদ নেই। পৃথিবীর সকল মানুষ সৃষ্টিগত ভাবে এক ও অভিন্ন। ‘মানুষ’ পরিচয়ে সবাই সমান মর্যদাবান।  
৪। উদ্ধৃত অংশটুকু পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
মাদার তেরেসা একজন মহীয়সী নারী। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাত ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে অসহায় মানুষের সেবা করে যান। গভীর মমতা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসা দিয়ে সকলের মুখে হাসি ফোটান। কারণ তিনি সবার ওপরে মানুষের স্থান দিন। মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমেই তিনি নিজের জন্মকে সার্থক করতে চেয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’  
(ক) “সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে।” ⎯ গানটির রচয়িতা কে?
উত্তর: “সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে”− গানটির রচয়িতা মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্। যিনি লালন ফকির নামে সর্বাধিক পরিচিত।
(খ) ‘জেতের ফাতা’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘জেতের ফাতা’ বলতে জাতের পরিচয়কে বোঝানো হয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষের নানা ধর্ম-বর্ণ বা জাতের পরিচয় রয়েছে। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম আবার কেউ বা অন্য কোন ধর্মের অনুসারী। বামুন-শুদ্র, বৃহৎ-ক্ষুদ্র এমন নানা শ্রেণীর কথাও শোনা যায়। এসব কৃত্রিম ভেদ নিয়ে মানুষ মিথ্যা গর্ব করে। লালন ফকির জাত পাতের এ কৃত্রিম ভেদাভেদকে অস্বীকার করেছেন।‘জেতের ফাতা’ বলতে তিনি অবজ্ঞাসরে জাত পাতের এই মিথ্যা পরিচয়কে নির্দেশ করেছেন।
(গ)  উদ্দীপকের বিষয়টি ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কীভাবে ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপকের বিষয়টি মানবধর্ম কবিতায় অত্যন্ত সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে। নিচে কবিতার আলোকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হল:
উদ্দীপকটিতে মানবতাবদী চেতনার সার্থক রূপায়ণ ঘটেছে। মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাদার তেরেসা মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী মাদার তেরেসার কাছে মানুষের জাত পাতের কোন ব্যবধান ছিলনা। আর্ত মানবতার সেবায় তিনি কোন শ্রেণী-শৃঙ্খলে আবদ্ধ হননি। বরং দুঃস্থ ও পীড়িত মানুষের সেবা করে তিনি তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মানুষ, কোন ধর্ম বা বর্ণ নয়। মানুষকে ভালো বেসে তিনি নিজের জন্মকে সার্থক করতে চেয়েছেন। তাঁর এ হিতৈষীপূর্ণ কাজের মধ্যে মানুষের সবচাইতে বড় পরিচয় মানুষ পরিচয়টিই সার্থক করে প্রতীয়মান হয়ে ফুটে উঠেছে। তাঁর বিশ্বাসের সাথে আমাদেরও বিশ্বাস যে, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসার বিশ্বসটিই অত্যন্ত সার্থকভাবে ফুটে উঠেছে। ‘মানবধর্ম’ কবিতায়। এ কবিতায় মরমি সাধক লালন শাহ জাত পাতের ভেদ ভুলিয়ে ‘মানবধর্মের’ জয়গান করেছেন। তাঁর মতে মানুষের কোন জাত, ধর্ম বা বর্ণের কারণে পৃথক করা উচিৎ নয়। কেননা মানুষ পরিচয়েই মানুষের সৃষ্টি হয়েছে। জন্ম বা মৃত্যুতে মানুষের কোন জাতের পরিচয় থাকে না। জাত বা ধর্মের বিভেদ দ্বারা এ সত্য এড়ানো ঠিক নয়। পরস্পর পরস্পরের কল্যাণে জন্ম গ্রহণ করেছে। ফলে মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের প্রতি প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে। আলোচ্য উদ্দীপকে মাদার তেরেসার কর্মকা- দ্বারা এ সত্যটি প্রতিফলিত হয়েছে যা ‘মানবধর্ম’ কবিতায় সব মানুষের সমতা বিধানের মধ্য দিয়ে সার্থক ভাবে ফুটে উঠেছে।
(ঘ) “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব একই ধারায় উৎসারিত” ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপকের মাদার তেরেসার কর্মকা-ে মানবপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিফলিত হয়েছে আবার ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানবপ্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম মনুষ্যধর্মের জয়গান করা হয়েছে। সুতরাং বলা যায় “উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূলভাব একই ধারায় উৎসারিত।” নিচে কবিতা ও উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করা হল:
মনবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্ রচিত ‘মানবধর্ম’ একটি গীতি কবিতা। লালন রচিত “সবলোকে কয় লালন কী জাত সংসারে”−শিরোনামে গানটিই এখানে কবিতা হিসেবে গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় মানবধর্মকে সকল জাত, ধর্ম, বর্ণ প্রথার উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। লালন ব্যক্তিগতভাবে জাত পাত বা ধর্ম-বর্ণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। জাতের ভিন্নতায় তিনি বিশ্বাস করেন না। মনুষ্যধর্মই তার কাছে মূলকথা। তাঁর বিশ্বাস মানুষকে ছাপিয়ে ধর্ম বড় হতে পারেনা। তাইতো তিনি মানুষকে স্থান দিয়েছেন সবার উপরে। লালনের এ বিশ্বাসের মূল চালিকাশক্তি মানবতাবোধ বা মনুষ্যবোধ।
উদ্দীকপে মাদার তেরেসার মাঝে মানবপ্রেম সার্থকভাবে জাগ্রত হয়েছে যা তাঁর কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। মাদার তেরেসা ধর্ম-বর্ণের ব্যবধানে নিজেকে গ-িবদ্ধ করেন নি। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র পরিচয়ের উর্ধ্বে যে সমগ্র মানব সমাজ তার কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করেছেন। মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়কে সবকিছুর উপর স্থান দিয়ে তিনি তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছেন গভীর মমতা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসায়। তাঁর মতে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মানুষের উচিৎ মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া এবং অসহায় অবস্থায় তাদের সহযোগিতা করা। মাদার তেরেসার এমন বিশ্বাসের পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে মানবতা বোধ বা মনুষ্যত্ববোধ। উদ্দীপকে ও কবিতার আলোকে আমরা বলতে পারি মাদার তেরেসা ও মরমি কবি লালন শাহ উভয়ের মাঝে মানবপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে যা মানবতাবোধ বা মনুষ্যবোধ থেকে উৎসায়িত হয়েছে।
সুতরাং বলা যায় উদ্দীপকের বিষয়বস্তু ও ‘মানবধর্ম কবিতার মূলভাব একই ধারাই উৎসারিত”− উক্তিটি সার্থক ও যথার্থ।

৫। উদ্ধৃত অংশটুকু পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আমাদের সমাজে দেখা যায় মুসলমানেরা টুপি, পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে এবং হাতে তসবি থাকে। আর হিন্দুরা ধুতি, শার্ট, পাঞ্জাবী পড়ে এবং গলায় মালা থাকে। পোশাক দিয়ে জাতের পরিচয়কে তুলে ধরার যে প্রচেষ্টা তা সত্যিই হাস্যকর। মানুষ জন্মের সময় যেমন কোন জাতের চিহ্ন নিয়ে আসেনি তেমনি মৃত্যুর সময়ও কোন জাতের চিহ্ন নিয়ে যাবেনা। তবু মাঝ খানের বাকিটা সময় শুধুই জাতের মিথ্যা অহংকারে নিজে দেরই ছোট করে তোলে। নিজেদের মানবসত্তাকেই অপমান করে।
(ক) লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আধ্যাত্মভাব ও মরমি রসব্যঞ্জনা।
(খ) ‘কেউ মালা, কেউ তসবি গলায়’ দিয়ে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘কেউ মালা, কেউ তসবি গলায়’− কথাটি দ্বারা মানুষের মাঝে ধর্মীয় ভেদাভেদকে বোঝায়।
পৃথিবীতে মানুষ নান ধর্মমতে বিশ্বাসী। ধর্মীয় বিভেদ বা সাম্প্রদায়িক চেতনায় মানুষ নানা উপকরণ ব্যবহার করে যা তাদের নিজ নিজ ধর্মের পরিচয় বহন করে। যেমন মুসলমানদের তসবি এবং হিন্দুদের জপমালা তাদের ধর্মীয় চিহ্ন হিসেবে পরিচয় বহন করে। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় এসব ‘মালা’ বা ‘তসবি’ জাতের চিহ্ন হিসেবে মানুষের কৃত্রিম ভেদকে বোঝানো হয়েছে। যা দ্বারা সাম্প্রদায়িক চেতনাকে জাগ্রতকরা হয়েছে।
(গ)  উদ্দীপক ও কবিতায় কোন ব্যাপারটির সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় ⎯ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপক ও কবিতায় বিভিন্ন ধর্মানুসারীদের মধ্যে বিভাজনকারী ধর্মীয় উপকরণ ব্যহার বা ধর্মীয় চিহ্ন বহন করার ব্যাপারটির সাদৃশ্য পরিমাপিত হয়। নিচে উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করা হল:
সবার উপরে মনুষ সত্য, তাহার উপরে নাই-চ-ীসাদের এই উক্তি চিরন্ত্রণ। কিন্তু আমাদের সমাজ বাস্তবাতায় ফুটে উঠে এর বিপরীত চিত্র। জাত-ধর্মের বর্ণের বিভেদ মানুষের কাছে বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে সেই অতীত কাল থেকেই। বর্তমান প্রগতিশীল সমাজের এই বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের মাঝে ধর্মীয় বিভাজনের চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে ‘কেউ মালা, কেউ তসবি গলায়’ অর্থাৎ তসবি মালাকে মানুষ ধর্মের চিহ্ন স্বরূপ ব্যবহার করে। মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচয় ‘মানুষ জাতি’ পরিচয় ভুলে গিয়ে কৃত্রিম ভেদে মানুষ নিজেদের মাঝে বিভাজন করে। কিন্তু লালন ফকির মানুষের এই কৃত্রিম ভেদকে স্বীকার করেন না। তিনি জাতপাতের চিহ্ন কে জানেনা। কারণ জন্ম মৃত্যুর সময় মানুষ কোন চিহ্ন বহন করে না। বরং এসব কৃত্রিম ভেদাভেদের চিহ্ন দ্বারা মানবতাকে হেয় করা হয়। মনুষ্যত্বকে অপমান করা হয়।
আলোচ্য উদ্দীপকেও সমাজের মানুষের মাঝে ধর্মীয় বিভাজনের চিত্রটি ফুটে উঠেছে। এখানে মুসলমান ও হিন্দুধর্মের অনসারীগণ তাদের নিজনিজ ধর্মীয় চিহ্ন বহন করে জাতের পরিচয় তুলে ধরে। যা হাস্যকর ও মানবতার জন্য পরিহাস স্বরূপ। কেননা জন্ম মৃত্যুর সময় হিন্দু মুসলমান কেউই তাদের নিজ নিজ ধর্মের চিহ্ন নিয়ে আসেনি। সুতরাং এসব কৃত্রিম ভেদ তাদের পরিচয় বহন করে না বরং তাদের মানবসত্তাকেই অপমান করে। এ বিষয়টিই উদ্দীপক ও কাবিতায় সাদৃশ্যপূর্ণভাবে ধরা পড়েছে।  
(ঘ) জন্ম ও মৃত্যুর সময় মানুষের মাঝে জাতগত পরিচয় থাকে না ⎯ কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: পৃথিবীতে মানুষ স্বাধীন ও মুক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে। মানুষের আদি উৎস এক ও অভিন্ন। জন্মর সময় মানুষের কোন জাত থাকে না, এমনকি মৃত্যুর সময় মানুষ কোন জাতের চিহ্ন বহন করে না। জন্মের পর থেকে মৃত্যু এই সময়টাকে মানুষ জাত ধর্ম বা বর্ণের বিভাজিত হয়। তাই জন্ম ও মৃত্যুর সময় মানুষের মাঝে জাতিগত পরিচয় থাকে না” কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নিচে ‘মানব ধর্ম’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করা হল:
মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ রচিত ‘মানবধর্ম’ একটি গীতিকবিতা। এ কবিতায় কবি মানুষের জাত ধর্মের পরিচয়কে অস্বীকার করেছেন কবির মতে জাত, ধর্ম বা বর্ণের ভেদাভেদ মানুষের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেনা। বরং ‘মানুষ’ পরিচয়ে মানুষের প্রকৃত পরিচয় নিহিত। ‘মানবধর্ম’ কবিতায় কবি বলেছেন, মানুষের চুড়ান্ত মুহুর্তে যাওয়া আসার বেলায় অর্থাৎ জন্ম-মৃত্যুর সময় জাত পাতের কোন চিহ্ন থাকেনা। তখন মানুষের একটাই পরিচয় থাকে সেটি ‘মানুষ’। মানুষ পরিচয়েই পৃথিবীর সবাই সমান মর্যাদার অধিকারী জাত পাতের ভেদাভেদ মানুষের মানবতার মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। মনুষ্যবলে অপমান করে। জাতিতে জাতি ভোদাভেদ সামজের সম্প্রীতি নষ্ট করে। তাই কৃত্রিম ভেদাভেদ ভুলে মানুষকে ‘মানুষ’ পরিচয় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
উদ্দীপকের আলোচনাতেও প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটির তাৎপর্য প্রকাশিত হয়েছে। মৌলিক পরিচয় মানুষের কৃত্রিম ভেদকে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে জন্মের সময় যেমন মানুষ যে কোন জাতের চিহ্ন নিয়ে আসেনি তেমনি মৃত্যুর সময়ও তাদের কোন পরিচয় থাকবে না। জাতপাতের পরিচয় মানুষকে বড় করেনা বরং তা মানব সত্ত্বাকে অপমান করে।
সুতরাং উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে বলা যায় আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে ‘মানুষ’। আর কোন পরিচয়ে সে পরিচিত নয়। জাতপাত বা ধর্ম, বর্ণ মানুষের সৃষ্ট কৃত্রিম ভেদ। এগুলো মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না। তাই জন্ম-মৃত্যুর সময় মানুষ কোন পরিচয় থাকেনা।
৬। উদ্ধৃত অংশটুকু পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
নিশিপুর গ্রামে নানা ধর্মের, নানা জাতের লোক বাস করে। কিন্তু তাদের মধ্যে গভীর ঐক্য রয়েছে। যে যার ধর্ম পালন করে নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী। কিন্তু অন্যদের ধর্মকে কখনও খাটো করে দেখেনা। যে কোন উৎসবে সবাই একসাথে আনন্দে মেতে ওঠে। তারা সবাই বিশ্বাস করে ধর্ম-শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনুষ্যত্ব।
(ক) লালন তাঁর দর্শন কীসের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন?
উত্তর: মানবতাবাদী মরমি সাধক লালন তাঁর গানের মাধ্যমে দর্শন প্রকাশ করেছেন।


(খ) জাত-ধর্মের ভেদাভেদ সমাজে কী প্রভাব ফেলে?
উত্তর: জাত ধর্মের ভেদাভেদ সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে মানুষের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করে।
সৃষ্টিকর্তার বিধানে মানুষের জাত-ধর্মের কোন স্থান নেই। তাইতো জন্ম-মৃত্যুর সময় মানুষের জাত-ধর্মের কোন চিহ্ন থাকে না। কিন্তু স্বার্থবাদী মানুষ তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এসব কৃত্রিম ভেদ তৈরি করে। যা মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরি করে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট করে। জাত-ধর্মের ভেদাভেদ মানুষের সাম্প্রদায়িক চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করে। সমাজে শ্রেণী বৈষম্য সৃষ্টি হয়। উচ্চবর্ণের লোকেরা নিম্নবর্ণের লোকদের নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে শৃঙ্খলিত করে। এছাড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মানুষ্যত্বহীন লোকেরা মানবতাকে অস্বীকার করে চরমভাবে অপমানিত করে। এভাবেই জাত ধর্ম ও বর্ণের ভেদাভেদ সমাজে অরাজকতা সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
(গ)  উদ্দীপক ও কবিতায় কীসের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে? তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপক ও কবিতায় মানুষের মানবতাবোধ বা মনুষ্যত্ববোধের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক চেতনা ভুলে গিয়ে মানুষের ‘মানবধর্ম’ চর্চার আহবান জানানো হয়েছে। নিচে উদ্দীপক ও মানবধর্ম কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা করা হল:
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয পাওয়া যায় মনুষ্যত্বের মাধ্যমে মরমি কবি লালন রচিত ‘মানবধর্ম’ কবিতায় মানুষের এই মনুষ্যবোধের ধর্ম চর্চার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষ পরিচয়ের মাধ্যমে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। জাত ধর্ম বা বর্ণ পরিচয়ে মানুষের আসল রূপ প্রকাশ করেনা। বরং এ গুলো মানুষের মাঝে কৃত্রিম ভেদাভেদ তৈরি করে। ফলে মানুষের মাঝে সাম্প্রদায়িক চেতনা সৃষ্টি হয় এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তারের চেষ্টা করে। এতে সামাজিক সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। মানুষ মনুষ্যত্বহীন হয়ে মানবতাকে অস্বীকার করে। মনুষ্যত্ববোধকে অপমান করে। তাই মানবধর্ম কবিতায় সব কুসংস্কার জাত ভেদ ও ধর্মভেদ ত্যাগ করে মানুষকে মানবধর্মে উজ্জীবীত হওয়ার প্রেরণা দেওয়া হয়েছে। কেননা সম্প্রদায়গত পরিচয়ের চেয়ে মানুষের ‘মানুষ’ পরিচয়ই বড়।
অন্যদিকে উদ্দীপকেও মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চিত্র ফুটে উঠেছে। নিশিপুর গ্রামে নানা ধর্মের মানুষ বাস করে। কিন্তু তাদের মাঝে দর্মীয় কোন বিভেদ নেই বরং আছে ঐক্য ও সম্প্রীতি। কেননা ধর্ম, বর্ণ বা জাতপাতের গ-িতে আবদ্ধ না হয়ে একসাথে মিলেমিসে বসবাস করে। ধর্মকে তারা বিশ্ব শান্তির প্রতীক রূপে এবং মনুষ্যত্ব বোধকে বসচেয়ে বড় পরিচয় হিসেবে গণ্য করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে উদ্দীপক ও কবিতায় মূলত জাত পাতের উর্দ্ধে উঠে মনুষ্যত্ববোধের উপর গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
(ঘ) ‘মানবধমই সবচেয়ে বড় ধর্ম’⎯ কথাটির তাৎপর্য আলোচনা কর।
উত্তর: ধর্ম মানুষের বাইরের আবরণ। মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে মানুষ। অর্থাৎ ধর্মের উর্ধ্বে ও মানুষের পরিচয় হচ্ছে সবাই মানুষ। সতরাং বলা যায়, ‘মানব ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ উক্তিটি সার্থক ও তাৎপর্যপূর্ণ। নিচে উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করা হল:
মানবতাবাদী মরমি কবি লালন শাহ্ রচিত ‘মানবধর্ম’ একটি গীতি কবিতা। আলোচ্য কবিতায় মানবধর্মকে সকল ধর্ম, জাত, প্রথার উর্দ্ধে স্থান দেয়ো হয়েছে। লালন শাহ মানবতাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। জাত, ধর্ম বা বর্ণকে তিনি স্বীকার করেননি। মনুষ্যধর্মই তাঁর কাছে মূলকথা। মানুষকে তিনি স্থান দিয়েছেন সবার উপরে। তাঁর বিশ্বাস মানুষকে ছাপিয়ে ধর্ম বড় হতে পারে না। তিনি মনে করেন জাত ধর্ম মানুষের সৃষ্টি। এ গুলো মানুষের মাঝে বিভাজন তৈরি করে। অকারণে নিজেদের মাঝে নানা বিভেদের দেয়াল তুলে দেয়। এ কারণে তিনি জাত-পাত, ধর্মভেদ ভুলে মনষ্যধর্ম পালন করার প্রতি সবাইকে আহবান জানিয়েছেন।
উদ্দীপকের আলোচনাতেও মানবতার ধর্মকে বড় করে দেখানো হয়েছে। ধর্মীয় পরিচয় ছাপিয়ে নিশিপুর গ্রামের মানুষের মাঝে মানসিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। ধর্মীয় পরিচয় তারা বিভাজিত না হয়ে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখেছে। বিভিন্ন উৎসব পার্বনে সকলে মিলেমিশে আনন্দকরে। ধর্মকে তারা বিশ্ব শান্তির প্রতীক হিসেবে বিশ্বাস করে। আর মনুষ্যত্ববোধকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে মানবতার প্রেমে উজ্জীবীত হয়।
উদ্দীপক ও মানধর্ম কবিতা থেকে জানা যায় ধর্ম নয় মানবতাই বড়। মানুষ সৃষ্টির সেরা। কারণ এদের মধ্যে আছে মানবসত্তা ও মানুষ্যত্ববোধ। এরপর ধর্মীয় পরিচয় ‘মানুষ’ পরিচয়ে সবাই সমান। কিন্তু ধর্ম আমাদেরকে বিভিন্ন ভাগ-উপভাগের মাধ্যমে পৃথক করে। ধর্মীয় পরিচয় থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানব পরিচয়। ধর্মীয় চেতনা থাকা সত্ত্বেও মানুষ যদি মনুষ্যত্বহীন হয়ে পড়ে তবে পৃথিবীর শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। ধর্মের বিভাজনে মানুষ এমন অশান্তির পথে ধাবিত হয়। তারা মানবতাকে মনুষ্যত্বকে অপমান করে। কিন্তু মানব প্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে মানুষ কখনও মানবতাকে হেয় করতে পারে না। কেননা সকল পরিচয় ছাপিয়ে তার কাছে মানবতা বড়, মানুষ হড় হয়। তাই ‘মানবধর্ম’ সবচেয়ে বড় ধর্ম- কথাটি সার্থক।  

1 comment:

Featured Post

English 2nd paper suggestion 2019 | CLASS 9 & SSC Paragraph Tree Plantation

Paragraph  Tree Plantation  | CLASS 9 & SSC English English 2nd paper  suggestion 2019  |  CLASS 9  & SSC  Paragraph    Tree...